অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন হলো একটি সম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সকল সুবিধার পাশাপাশি হাতের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অস্টিওপ্যাথিক ম্যানিপুলেটিভ ট্রিটমেন্ট (ওএমটি)।
একজন অস্টিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাধারণ সকল চিকিৎসা জ্ঞানের পাশাপাশি কমপক্ষে অতিরিক্ত ২০০ ঘণ্টা সময় অস্টিওপ্যাথিক ম্যানুপলেটিভ মেডিসিন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। অস্টিওপ্যাথিক ম্যানিপুলেটিভ ট্রিটমেন্ট-ওএমটি হাতের সাহায্যে এমন এক চিকিৎসা কৌশল যার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, চিকিসা এবং অসুখ ও আঘাতজনিত নিরাময় সম্ভব।
অস্টিওপ্যাথিক মতে, মানুষ হচ্ছে শরীর, মন ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বিত রূপ। মানব দেহ পা থেকে মাথা পর্যন্ত এর সকল অর্গান, মাসল, ফ্লুয়িড, মেকানিজম ফেসিয়া এবং ফাইবার টিস্যু দ্বারা আবরিত এবং সংযুক্ত। এর ফলে দেখা যায় যেখানে ব্যথা হয়, ব্যথার আসল উৎস সেখানে নয়, বরং অন্য কোথাও। সাধারণ চিকিৎসায় ডাক্তার ব্যথার জায়গায় সাময়িক ঔষধ প্রয়োগ করেন । এতে কিছু সময়ের জন্য ব্যথার অনুভূতি নষ্ট হয় । মনে হয় ঔষধ খেয়ে ব্যথার নিরাময় হয়েছে। কিন্তু পরে আবার ব্যথা অনুভূত হয় । এবং অনেক ক্ষেত্রে ঔষধের ওপর রোগী নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । একজন অস্টিওপ্যাথিক ডাক্তার রোগীর মধ্যকার ইমিউন সিস্টেমের নিষ্ক্রিয় রেগুলেটরি মেকানিজম এবং সেলফ হিলিং প্রসেসকে সক্রিয় করতে সমর্থ হন। তিনি আপনাকে প্রয়োজনে ঔষধ দেবেন এবং তা পরিমাণে কম । কিন্তু তার আগে তিনি আপনার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া সেলফ-রেগুলেটরি মেকানিজম এবং সেলফ হিলিং প্রসেসকে সক্রিয় করবেন। যাতে আপনি সহজেই রোগ মুক্ত হবেন। অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাদের হারানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরে পাবেন।
দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র ব্যথামুক্তির জন্য ওএমটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি নিরাময় পন্থা। অস্টিওপ্যাথিক ম্যানিপুলেটিভ ট্রিটমেন্ট সাধারণত মাংসপেশীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এই পদ্ধতি রোগীর অন্যান্য রোগেরও উপশম ঘটায়।
ডাঃ এ. টি. স্টিল-কে এই চিকিৎসা পদ্ধতির জনক বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই চিকিৎসা পদ্ধতি তারই হাত ধরে ১৮৭৪ সাল থেকে আমেরিকার মিসৌরিতে মেডিকেল শিক্ষার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এটি আমেরিকার সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু চিকিৎসা ব্যবস্থা।
অস্টিওপ্যাথি রোগীর বা অসুস্থ দেহের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে শারীরিক, মানসিক, ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক পুনর্গঠনের কাজ করে । এর ফলে বডি ফ্লুয়িড এবং নার্ভ ফাংশন নতুন ভাবে কাজ করে। ফলে টিস্যু ও অর্গানের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ দেহ নিজেই উৎপন্ন ও সরবারহ করে। সে ক্ষেত্রে একজন অস্টিওপথ্যিক ডাক্তার প্রত্যেক রোগীর জন্য স্বতন্ত্র ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করেন। এতে রোগীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামাজিক, সাংকৃতিক, পটভূমির একটি আঙ্গিক উঠে আসে। এর মাধ্যমে রোগীর রোগের মূল উৎস অস্টিওপ্যাথিক ডাক্তার চিহ্নিত করেন।